ইউরোপ সহ পাশ্চাত্যের
প্রায় প্রতিটি দেশের জনগণের খাদ্য তালিকায় প্রথমেই যে মাংসের নামটি উঠে আসে, তার নাম শুকর। এসব দেশে প্রচুর
পরিমাণে শুকর উৎপাদন হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে শুধুমাত্র ফ্রান্সেই আছে ৪২,০০০ (বিয়াল্লিশ
হাজার) পরিমাণ শুকরের খামার। পৃথিবীর সকল প্রাণীর চেয়ে শুকরের দেহেই রয়েছে সর্বাধিক পরিমাণ
চর্বি। আবার ইউরোপ আর আমেরিকার মানুষদের মাঝে রয়েছে চরম চর্বি ভীতি! সেখান কার
জবাই খানা গুলো থেকে শুকরের মাংস বাজারে চলে যাবার পর প্রচুর পরিমাণ চর্বি জমা হয়ে
থাকে। এসব জবাইখানা পরিচালিত হয়, খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে।
প্রতিদিন জবাইখানা গুলোতে
বিরাট পরিমাণের চর্বি স্তূপ সরাতে খাদ্য অধিদপ্তরদের কর্মকর্তাদের দুঃচিন্তা হিমসিম
খেতে হয়। ১৯৪০ সালের আগেও এসব চর্বি জালিয়ে ফেলা হত। পরবর্তীতে
তারা চর্বিকে কোন কাজে ব্যবহার করা যায় কিনা, এটা নিয়ে পরীক্ষা
নিরীক্ষা চালাতে থাকে। পরীক্ষায় সফলতা আসে; ফল স্বরূপ
প্রাথমিক ভাবে চর্বিকে সাবান তৈরির কাজে ব্যবহার শুরু হয়। পরবর্তীতে
আরো ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে, এসব চর্বিকে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান ও প্রসাধন সামগ্রী বানাতে
ব্যাপক ভাবে ব্যবহার শুরু হয়। যেসব জমাট সামগ্রী একটু গরমে নরম হলেও, সাধারণ অবস্থায়
পূর্বের মত জমাট আকার ধারণ করে, সেসব বস্তুতে চর্বিকে কাজে লাগানো হয়। যেমন, টুথপেষ্ট, চকলেট ইত্যাদি। আবার যেসব
বস্তু জমাট আকারেই থাকবে তবে তার ব্যবহার হবে মসৃণ; সেসব বস্তুতেও
চর্বির ব্যবহার শুরু হয়, যেমন সাবান, লিপস্টিক, ফেস ক্রিম
ইত্যাদি। কিছু খাবারকে আকর্ষণীয় করে প্রদর্শন করতে, উপরে সাইনিং
গ্লেজ দরকার; সেসব খাবারের উপর ব্রাশ দিয়ে চর্বির উপাদান লেপ্টে দেওয়া
হয়, যেমন কেক, বন, ডুনাট ইত্যাদি। সবাই জানে চর্বির স্বভাব
এই ধরনেরই। আর গবেষকেরা চর্বির এই চরিত্রটিকেই কাজে লাগিয়েছে ব্যাপক হারে!
ইউরোপে শিল্প বিপ্লব পরবর্তীতে
শুকরের চর্বি শুধুমাত্র সাবান উৎপাদনে ব্যবহার না হয়ে, যখন খাদ্য
উপাদানেও ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করল। তখন ইউরোপের বিভিন্ন কোম্পানি গুলো তাদের পণ্যকে আকর্ষণীয়
পন্থায় বাজার জাত করতে অত্যাধুনিক ও নান্দনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ফলে চর্বি
সংক্রান্ত ব্যবসায়ে জড়িত কোম্পানিগুলোও তাদের ব্যবসায়ের স্বার্থে একত্রিত হয়ে চর্বিকে
রাসায়নিক উপাদানের মাধ্যমে প্যাকেট ও বাজারজাত করার প্রতি নজর দেয়। একই সময়ে ইউরোপিয়ান
দেশ গুলো একত্রিত হয়ে একটি ঐক্যমত্যে পৌঁছে যে, বাজারজাত সকল
খাদ্যের গায়ে, প্যাকের মাঝে কি কি খাদ্য উপাদান আছে তা অবশ্যই উল্লেখ করতে
হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুকরের চর্বির প্যাকেটের গায়ে খাদ্য উপাদান হিসেবে লিখিত
হল ‘PIG FAT’ তথা শুকরের চর্বি। এতে সমস্যা দেখা দিল মুসলিম
দেশ গুলোতে। মুসলিম ভোক্তারা দেখতে পেল উৎপাদিত কোম্পানিই ঘোষণা দিচ্ছে প্যাকেটে শুকরের
চর্বি উপাদান আছে! যার কারণে তারা তা কিনতে অপারগতা দেখায়। এমনকি এসব
পণ্যকে মুসলিম বিশ্বে কড়াকড়ির সাথে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পাঠকদের নিশ্চয়ই
জানা আছে যে, ভারতে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লব রুদ্ধ করে দিতে ব্রিটিশ বাহিনী
নিপীড়ন নীতি গ্রহণ করে। লক্ষাধিক মানুষ সেই সময়ে মারা যায়, যার অধিকাংশই
মুসলিম। ঠিক সেই সময়ের ব্রিটিশ বাহিনীতে কর্মরত মুসলিম ও হিন্দু সৈন্যরা বিদ্রোহী নির্মূলে
ব্রিটিশের আদেশে গুলি চালাতে অপারগতা প্রকাশ করে। সেই ঘটনার
মূলেই ছিল এই শুকরের চর্বি।
মৌলভী মোহাম্মাদ বাকের
১৮৩৭ সালে উর্দু আকবর পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং তিনি পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে ব্রিটিশের
বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। শাস্তি স্বরূপ ব্রিটিশ বাহিনী ১৮৫৭ সালে তাকে কামানের মুখে
(তোপের মুখে) দাঁড় করিয়ে কামানের গোলার মাধ্যমে উড়িয়ে দেন তখনকার ব্রিটিশ
শাসনামলে গুলি তৈরি হত ইংল্যান্ডে আর তা ব্যবহারের জন্য জাহাজের মাধ্যমে হাজার মাইল
পাড়ি দিয়ে আনতে হত ভারতে। জাহাজে পাটাতনে রৌদ্র তাপে বারুদ এবং বন্দুকের গুলি জাহাজের
ডেকেই বিস্ফোরিত হবার সম্ভাবনা থাকত। তাই তাপ কমানো সহ নানা নিরাপত্তার জন্য গুলির চারিদিকে চর্বি
নির্মিত একটি কভার থাকত। গুলিটি বন্দুকে ঢুকানোর আগে সৈন্যদের দাঁত দিয়ে চর্বির কভার
টি ছিঁড়ে ফেলতে হত। এই ঘটনা প্রকাশ পাবার পর মুসলিম ও হিন্দু সৈন্যরা গুলি চালাতে
অপারগতা প্রকাশ করে। সেটা নিয়ে সংগঠিত কোন্দল ও দাঙ্গা ঠেকাতে ব্রিটিশ সরকারকে
অনেক খেসারত দিতে হয়েছিল! শুকরের চর্বি নিয়ে একই সমস্যায় ব্রিটিশ ও ইউরোপীয়রা তাদের
বহু বাজার হারায়। ফলে তারা নতুন বুদ্ধি আবিষ্কারে প্রমাদ গুনে।
এর পরে ইউরোপিয়ান ব্যবসায়ীরা
তাদের পণ্যের গায়ে ‘PIG FAT’ না লিখে, লিখতে শুরু
করে ‘ANIMAL FAT’ তথা প্রাণীজ চর্বি! ১৯৭০ দশকে
আবারো মুসলিম দেশগুলোতে থেকে জানতে চাওয়া হয় এসব কোন ধরনের প্রাণীর চর্বি? তখন ব্যাখ্যায়
বলা হত এসব গরু কিংবা ভেড়ার চর্বি, তবে প্যাকেটের গায়ে গরু-ভেড়ার চর্বি
দাবী করা হত না। তখন নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, যুক্তির খাতিরে
যদি ধরাই হয় এসব গরু কিংবা ভেড়ার চর্বি! তারপরও মুসলমানদের এসব
চর্বি-জাত দ্রব্য খাওয়া হারাম। কেননা এসব প্রাণী জবাই করার সময় আল্লাহর নামে জবাই করা হয়নি। আল্লাহর নামে
জবাই না হবার কারণে হালাল পশুর মাংস ও মাংসজাত দ্রব্যও হারাম হয়ে যায়। ফলে মুসলিম
বিশ্ব পুনরায় প্রাণীজ চর্বি নিষিদ্ধ করে এবং এসব চর্বি জাত সামগ্রী আমদানি নিষিদ্ধ
করা হয়। এরফলে মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানি গুলো বহু বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়ীক লোকসানির
মুখে পতিত হয়। এসব কোম্পানির ৭৫% ব্যবসা মুসলিম দেশ গুলোর উপর নির্ভরশীল। বারে বারে
এভাবে তাদের ব্যবসায়ীক চাতুরী ধরা পড়ার পরে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, এ ব্যাপারে
একটি ব্যবসায়ীক কোডিং ভাষা সৃষ্টি করা হবে! ‘Departments of
Food Administration’ ছাড়া এই ভাষা আর কেউ বুঝতে পারবেনা। সর্ব সাধারণ
ক্রেতারা জানতে পারবেনা তার অভীষ্ট খাদ্য কি উপাদান দিয়ে তৈরি হয়েছে! এরই পরিপ্রেক্ষিতে
১৯৯০ এর দশকে ‘Departments of Food Administration’ নতুন একটি
কোডিং ভাষা চালু করে যার নাম দেওয়া হয় E-CODES. তখন থেকে সকল প্রকার প্যাকেটে
E-INGREDIENTS হিসেবে সকল বস্তুর উপাদানের নাম লিখিত হয়ে আসছে। ইউরোপ আমেরিকায়
ব্যবসা করতে হলে, এই আইনকে কড়াকড়ি ভাবে সবাই মানতে বাধ্য, আজ অবধি এই
আইন মেনেই সবাই ব্যবসা করছেন। আজকের বাজরে এমন হয়েছে যে, ইউরোপের মালামালে
লিখা থাকে চর্বি এত শতাংশ কিন্তু কিসের চর্বি তা ব্যবসায়িক মতলবে লুকানো হচ্ছে! নিজের আইন
বানিয়ে, নিজেরা এত কঠোর হবার পরও তারা তাদের উৎপাদিত কিছু সামগ্রীর গায়ে
E-INGREDIENTS উল্লেখ করেনা! কৌতূহল এবং প্রশ্ন সেখানেই! সে সব জিনিষের
তালিকাটি হল নিম্নরূপ:
TOOTH PASTE, SHAVING
CREAM, CHEWING GUM, CHOCOLATE, SWEETS, BISCUITS, CORN FLAKES, TOFFEES, CANNED
FOODS, FRUIT TINS ইত্যাদি।
কেন! এমনটি করা
হয়েছে তা ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে বুদ্ধিমান ও সতর্ক ব্যক্তি পড়া মাত্রই বুঝে নেওয়া উচিত
এবং তার বিপরীতে নিজের মত করে আরেকটি বিকল্প বের করা তারই দায়িত্ব। কেননা ঈমানদার
ও তাকওয়া সম্পন্ন ব্যক্তি মানেই সকল বিষয়ে অতি সতর্ক একজন মানুষকে বুঝায়। ঔষধ এবং মাল্টি-ভিটামিন তৈরি
করা হয় হারাম উপাদান দিয়ে! এসব পণ্যে নির্বিচারে মুসলিম দেশ গুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে
মুসলিম সমাজের শিশুদের মাঝে বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, কর্কশতা, রূঢ় স্বভাব, নৈতিক সাহস, যৌন বিমিশ্রতা
সহ নানাবিধ চারিত্রিক ও সামাজিক অধঃপতন নেমে আসছে। মুসলিম আর
হারাম ভক্ষকদের সন্তানকে কাউকে আলাদা করে চেনাটা দায় হয়ে পড়ছে! সুতরাং সতর্ক
মুসলিম কিংবা শুকরের মাংস খায়না এমন সচেতন ব্যক্তিরা যদি একটু সচেষ্ট হন তাহলে এর থেকে
পরিত্রাণ পেতে পারেন। তবে তাদেরকে অবশ্যই ‘E-CODES’ নিয়ে ধারনা
থাকতে হবে। সবার পক্ষে যেহেতু ‘E-CODES’ গবেষণা করা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয় তাই
নিচের তালিকা দেখে এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন এই কোডের জিনিষগুলো খাবেন না, ব্যবহার করবেন
না। তাহলে শুকরের চর্বি অথবা হালাল প্রাণীর হারাম চর্বি-জাত খাদ্য
থেকে নিজে বাঁচবেন বংশকে বাঁচাতে পারবেন। কোডগুলো নিম্নরূপ:
E100, E110, E120,
E140, E141, E153, E210, E213, E214, E216, E234, E252, E270, E280, E325, E326,
E327, E334, E335, E336, E337, E422, E430, E431, E432, E433, E434, E435, E436,
E440, E470, E471, E472, E473, E474, E475, E476, E477, E478, E481, E482, E483,
E491, E492, E493, E494, E495, E542, E570, E572, E631, E635, E904.
একটি উদাহরণ: এই লিখাটি
পড়ে অনেক পাঠকের মনে কৌতূহল ও বিভ্রান্তি দুটোই সৃষ্টি করবে। অনেকে তথ্য
যাচাই করার জন্য সম্ভাব্য সকল উপায় অবলম্বন করবে এবং করাটাই উত্তম। কৌতূহলী ও
সতর্ক পাঠক যদি প্রথম নম্বর তথা ‘E100’ কে যাচাই করতে চান, তখন ব্যাখ্যায়
বলা হবে ‘Curcumin’ - Yellow-orange Colour. অথবা Turmeric
তথা হলুদ। ফলে মনে হতে পারে, হলুদ কোন অর্থেই
হারাম পণ্য হতে পারেনা, কেননা এটি উদ্ভিদের মূল থেকে আহরিত একটি গুরুত্বপূর্ণ মশলা! উল্লেখ্য
‘E100–E199’ নম্বর পর্যন্ত সংখ্যাগুলো ব্যবহৃত হয়েছে রংয়ের জন্য। ‘E100’ কোডটি হলুদাভ
কমলার জন্যই প্রযোজ্য, আর সমস্যাটা এখানেই। রংটি যদি সরাসরি
হলুদ থেকে নেওয়া হয় সমস্যা নাই আর রংটি যদি তরল ও পাউডার আকারে ল্যাবরেটরিতে বানানো
হয়, তাহলে বুঝতে হবে সেটা তৈরি করতে হারাম উপাদান তথা এলকোহলের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। ‘E100 –
INGREDIENTS’ টি খাদ্য দ্রব্যের জন্য একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি বাজার
জাত দ্রব্যকে সূর্যালোক সহ বিভিন্ন আলোর অনিষ্টটা থেকে দীর্ঘসময় বাঁচিয়ে রাখে। খাদ্য উপাদানের
হলুদ রং দীর্ঘস্থায়ী ও আকর্ষণীয় করতে এটির ব্যবহার ব্যাপক। কাঁচা হলুদ
থেকে আহরিত রস দিয়ে রং করলে ক্ষণকাল পরে দ্রব্য বিবর্ণ হয় এবং রং তলানিতে বসে যায়। বোতল ঝাঁকিয়ে
ব্যবহার করতে হয় আবার আসল হলুদের রং দীর্ঘদিন স্থায়ীও হয়না। তাই দ্রব্যে
হলুদ রং ধরে রাখতে হবে এবং তা দীর্ঘদিন অব্যাহত রাখতে হবে। তাই দ্রব্যের
হলুদ রংয়ের সমস্যা দূর করতে রংয়ের মূল উপাদানকে অ্যালকোহলে দ্রবীভূত করে রাখতে হয়। পরে একটা নির্দিষ্ট
পদ্ধতির মাধ্যমে এই রং বাজার জাত করা হয়। সে কারণে এটা হারাম, কেননা এটা
তৈরি করতে সরাসরি হারামের সহযোগিতা নিতে হয়েছ এবং তখনও তার ভিতরে হারাম বিদ্যমান। একই পদ্ধতিতে
স্প্রে আতরও তৈরি হয়, তাই সেটাও হারাম। ‘E100’ উপাদানটি রেডি-ম্যাট পানীয়, বেকারির দ্রব্য, আইসক্রিম, দই, বিস্কুট, ভুট্টার রঙ্গিন
খই, মিষ্টি, কেক, নুডুলস্, মায়োনাইজ, আচার, সচ, জিলেটিন, বিরিয়ানি, সুপ, ফাস্টফুড সহ
প্রচুর রেডিমেড খাদ্যে ব্যাপক পরিমাণে ব্যবহার হয়।
Fatty Acid (ফ্যাটি এসিড) খাদ্য ও পুষ্টির
জন্য একটি বহুল ব্যবহৃত উপাদান। অনেক প্রকারে ফ্যাটি এসিড আছে, যেমন; Stearic
Acid, Lauric Acid, Myristic Acid, Oleic Acid, Palmitic Acid. ফ্যাটি এসিড
মূলত প্রাণীজ চর্বি ও উদ্ভিজ্জ তৈল থেকে তৈরি হতে পারে। উদ্ভিজ্জ তৈল
ভোক্তারা রান্নায় কাঁচা খাওয়ার কারণে এমনিতে এটার বাজার মূল্য চড়া থাকে। তৈল দিয়ে ফ্যাটি
এসিড বানানোর চাইতে, চর্বি দিয়ে বানানো সহজসাধ্য। স্বল্পমূল্য, হালকা কারিগরি
প্রয়োগ ও অধিক মুনাফার কারণে ব্যবসায়ীরা চর্বি দিয়েই এই কাজটি সেরে নেয় তা বলাই বাহুল্য। পণ্যের মাঝে
এসবের কোন ব্যাখ্যা থাকেনা। উৎসাহী পিতামাতারা বাজার থেকে কিনে বাচ্চাদের যে সব টিনজাত
পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়াচ্ছেন! তারা কি কখনও লক্ষ্য করেছেন যে, পুষ্টির তালিকার
শুরুতেই লিখা আছে Fat %! কোথাও কি বলা আছে সেটা কিসের Fat? শফিং মল গুলোতে
চোখ বন্ধ করে একটি পুষ্টিকর খাবারের প্যাকেট হাতে নিলেও দেখা যাবে ‘Fat’ ব্যতীত কোন
খাবারই নাই! হয়ত মনে উত্তর আসবে এটার প্রয়োজন বলেই রাখা হয়েছে! আসল ব্যাপার
হল, এই সামান্য ফ্যাটে খাদ্য উপাদানের কোন তারতম্য হয় না, এটা দেওয়া
হয়েছে খাদ্যকে সুন্দর দেখাবে কিংবা গরম করলে হালকা ফেনা উঠবে কিংবা শুকনো খাদ্য কণা
একটার সাথে অন্যটা লেগে যাবেনা। ব্যবসায়ীদের এই সামান্য সুবিধার জন্য ক্রেতাদের সাথে পরিহাস
করা হয়। লাল চিনি অনেকেই খায়না, মোটা চিনি আত্মসম্মানের ভয়েও কেউ কিনে না! প্রয়োজনে Refined দাবী করা চিনি
বেশী টাকা দিয়ে কিনে খায়, রোজা রাখে, ইফতারীও করে। কেউ কি ভুলেও
চিন্তা করেছে যে, এই চিনিকে রিফাইন্ড করতেও যে হারাম চর্বির ঘষা লাগানো হয়েছে! ব্যবসায়ীর
কাছে মুনাফাটাই বড়, যার কাছে ঈমান বড়, তার কাছে এই
খবর মৃত্যু তুল্য সংবাদ হবে কোন সন্দেহ নাই। তাই বিদেশী এসব খাদ্যের
উপর নির্ভর না করে, নিজ দায়িত্বে ঘরের খাদ্যে নির্ভর করাই উত্তম। বাজারের নাস্তাকে
বাদ দিয়ে ঘরে মা অথবা গিন্নীর হাতের পিটা পায়েস খাওয়া শতগুন বেশী ভাল।
আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা
যথার্থই আল্লাহর বান্দাহ হও, তাহলে যে সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস
তোমাদের দেওয়া হয়েছে, সেগুলো নিশ্চিন্তে খাও এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করো’। সূরা বাকারা-১৭২
এখানে গুটিকয়েক খাদ্য
উপাদানের ব্যাখ্যা করা হয়েছে, শুধুমাত্র অন্তনিহীত রহস্য বুঝার জন্য। এভাবে সকল
খাদ্য উপাদানের ব্যাখা করতে হলে পাঠক অবশ্যই ত্যক্ত বিরক্ত হবে। বাজারে এমন
কিছু দামী খাদ্য আছে যার লোভনীয় ঘ্রাণ নাকে আসলেই মানুষের মন মৌ মৌ করে। অথচ তিনি জানেন
না, খাদ্যের সেই ঘ্রাণ তৈরি করা হয়েছে মানুষের লোম কিংবা হাঁসের পালক পোড়া ছাই থেকে! তাই আল্লাহ
বলেছেন চিন্তা করতে ও নিজের বিবেক বুদ্ধিকে সজাগ ও সতর্ক রাখতে। শুধুমাত্র
সুন্দর রংয়ের খাদ্য ও আকর্ষণীয় পানীয় পান করতে গিয়ে নিজের অজান্তে কত বড় সর্বনাশ ডেকে
নিচ্ছি তা কেউ চিন্তা করছিনা। আলস্য, অভিলাষ, ও প্রেস্টিজ ইস্যুর কারণেই আমরা এসব দ্রব্য ব্যবহার করি। অন্যদিকে নিজের
জীবন, চরিত্র, সর্বোপরি বস্তুনিষ্ঠ কর্ম সবই হুমকির মুখে পড়বে। একজন ইমানদার
কঠিন ভাবে জীবন যাপন করার পরও নিজের অজান্তে ইমান খুইয়ে জাহান্নামের কিনারায় এসে পড়বে। এসব অবহেলা
ও নিদ্রামগ্নতার জন্য আল্লাহ অবশ্যই পাকড়াও করবে। একজন অমুসলিম
হলেও হারাম দ্রব্য গ্রহণে দুনিয়ার জীবনে অপমান আর লাঞ্ছনা তার পিছু ছাড়ে না।
Dr. M. Amjad Khan,
Medical Research Institute, United States
জাযাকাল্লাহ
ReplyDeleteখায়রান
জ্বি অনেক সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে বিষয়টি।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ
Please do not enter any spam link in the comment box.