Type Here to Get Search Results !

কখনো কি ভেবে দেখেছেন? মেয়েদের ব্যাপারে আমাদের ভাবনা!

২০১৬ ইং সালের এপ্রিল মাস, আমরা যে বাসায় থাকতাম সে বাসার চারতলাতে যিনি থাকতেন তার ছেলের বিয়ে। গায়ে হলুদের খাবারের ডেকোরেশনটা আমিই করে দেই। তাদের অনুষ্ঠানে তুলনামূলক লোকজন কমই ছিল। মেয়েদের সংখ্যাই বেশি ছিল। সাধারনত আমি কোন বেগানা পুরুষের সামনে যাই না। সেই দিন ও যাইনি, রাত এগারোটার সময় কয়েকজন মেয়ে প্রায় জোর করেই আমাকে নিয়ে যায় ছাদে। তখন ছেলেরা ছাদে ছিলনা সব মেয়েরাই ছিল। ভাবলাম কোন ছেলে যেহেতু নেই সব মেয়েরাই আছে তাহলে তো যাওয়াই যায়।

সাজ বলতে চোখে কাজল আর লিপস্টিক পরনে সাদা সালোয়ার কামিজ। যে মেয়েরা ছিল সবাই ৯-১১ ক্লাসে পড়ে। মেয়েটা দশম শ্রেণীতে পড়ে। আগে থেকেই পরিচিত। সবার সামনে নির্দিধায় বলে দিল "আপু তোমার ঠোটটা দেখতে খুব মিষ্টি আর সেক্সি লাগছে ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি।" তখনই সাথে সাথে নিচে আমাদের ফ্ল্যাটে চলে আসি। একটা ১৫/১৬ বছরের মেয়ে যদি এমন বলতে পারে আর এমন কুনজরে দেখতে পারে তাহলে একটা ছেলের ভাবনা কতটা জঘন্য হতে পারে ভাবতেই গা শিউরে উঠে।
উপরের কথাগুলো হয়তো কারোর কাছে ভাল লাগেনি, হয়তো কেউ কেউ আমাকে বলবেন ভাল মানুষের রুপে নির্লজ্জ একটা মেয়ে, নয়তো সবাই পোস্টটা ইগনোর করে যাবেন।

কিন্তু এমন কথা বা এর থেকেও অনেক বাজে কথা অনেকেই বলে এবং শোনে। সেসব কথা গুলো কিন্তু সবার কাছে ঘৃণ্য বা খারাপ বা বাজে কথা মনে হয় না।

নারী শিক্ষা ও নারী অধিকার একটা মেয়েকে কোথায় নিয়েছে তা সবাই জানে, কেউ মানে, কেউবা মানতে নারাজ।

স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের একসাথে কোচিং ক্লাস করা, একই শারীরিক শিক্ষা বই ছেলে মেয়ে সবাই পড়ছে গোপনীয়তা বলতে যেখানে কিছু নেই। কলেজ পড়ুয়াদের তো একসাথে কাধে কাধ মিলিয়ে না চললে নারী অধিকার রক্ষা ই হয় না।

টাইট জামা কাপড়, ওড়না বিহীন দেহ, জিন্স স্কিন টপস, ফতুয়া সাথে শর্ট সালোয়ার, পাতলা জামা কাপড় পরা, ড্রিঙ্কস/এলকোহল, লেট নাইট পার্টি এ সবই নারী অধিকারের আওতাভুক্ত।

You are looking cool/sexy/gorgeous/cute/sweet. আপু/ভাবী আপনাকে খুবই সুন্দর দেখাচ্ছে, দোস্ত তোরে যে আজ হেব্বি লাগছে মন চাইছে যা ইচ্ছা তাই করি, আপু/ভাবী/তুমি এত সুন্দর যে কেউ তোমাকে পেতে/শয্যা সঙ্গী করতে চাইবে, এত সুন্দর রুপ লুকিয়ে রাখতে নেই, ভাই/ভাবী আপনার মেয়ে টা খুব সুন্দরী যে দেখবে সেই পাগল হয়ে যাবে, ভাই/ভাবী আপনার মেয়ে এই ছোট্ট বয়সেই যা সুন্দর ছেলেরা তো পাগল হয়ে যাবে বিয়ে দিতে কাঠখর পোহাতে হবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। ছেলেদের এমন ধরনের কথা না বললেই যেন নয়। আর ৯৫% মেয়ে প্রকাশ্যে আর মনে মনে এসব কথা শুনার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। কেউ এমন কথা বললেই যেন নিজেকে ধন্য মনে করে।

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এসবই একটা ধর্ষণ ঘটনার প্রথম ধাপ?

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এই সব কথাই ছেলেদের কামুক রুপ প্রকাশ করে যেটার শিকার একদিন আপনিও হতে পারেন?

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, যখন আপনার ছেলে বন্ধু টি আপনাকে বলছে সুন্দর/সেক্সি/কুল সে কতটা বাজে ভাবে দেখছে আর তার চোখ দিয়ে আপনাকে ধর্ষণ করছে?

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আজ আপনি যেসব আটসাট টাইট জামা কাপড় পরছেন তা অন্যের চোখের কামুক খোরাক জোগায়?

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আপনার খোলাখুলি চলাফেরা ছেলেদের যৌনতা বাড়াচ্ছে যা কখনো কখনো পর্দানশীন মেয়েরা তার শিকার হচ্ছে?

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আপনারা নারীর যে সম অধিকারের কথা বলছেন তা আপনাকে নোংরামি করতে বাধ্য করছে? (যদিও অনেকে নিজ ইচ্ছা তে নোংরামি করে আর সেটাই তাদের কাছে যুগের চাহিদা)

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, যদি একটা মেয়ে অন্য মেয়েকে কুদৃষ্টি তে দেখতে পারে তবে একটা ছেলে কতটা জঘন্য ভাবে আপনাকে দেখতে পারে?

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আজ একটা মানুষ যখন আপনার মেয়ে সন্তানের গঠন আকৃতি সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারে তবে একটা ছেলে আপনার মেয়ে কে ভোগ করতে চাইবে না এর নিশ্চয়তা কি?

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আপনার সৌন্দর্য প্রকাশ করার মাঝেই কি সৌন্দর্যের স্বার্থকতা?

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আজ আপনারা যারা যুগের চাহিদা বা আধুনিকতা প্রকাশ করতে পার্টি করে বেড়াচ্ছেন তারাদের অনেকেই ধর্ষিত হচ্ছেন? এর জন্য দায়ী কে ? আপনার ছেলে বন্ধু নাকি আপনি? আপনার বাবা মা ও দায়ী নয়তো?

ভেবে দেখেছেন কি, এতসব মেয়েদের খোলামেলা চলাফেরা, ছেলেদের সাথে হৈ হুল্লোড় করা এসব একটা ছেলে কে যৌন কামুক করছে যার কারনে আপনাকে বা অন্য কাউকে ধর্ষণ করছে, এই ধর্ষণের ঘটনার জন্য আপনি আর আপনারা পরোক্ষ ভাবে দায়ী?

এতগুলো প্রশ্নে কিন্তু আমি একবারের জন্যও ধর্মের কথা বলি নি কারন আমি আমাকে বর্তমান যুগের সাথে আধুনিকতার কাতারে রেখে প্রশ্ন গুলো করেছি।

মায়েরা ও বোনেরা পারবেন কি আমার কথার জবাব দিতে? হয়তো কেউ কেউ বলবেন, "আমরা সুন্দর/খোলাখুলি চলি বলেই কি ছেলেদের বাজে ভাবে দেখতে হবে বা ধর্ষণ করতে হব? ওরা নিজেদের কন্ট্রোল করতে পারে না? মুসলমানদের তো ধর্ষনের মত জঘন্য কাজ করার অনুমতি দেয়নি আল্লাহ। "আরো কত কি। কিন্তু এসব কথা কি সমাধান আনবে? আপনারাই বলেন।

এখন আসি ধর্মের কথায়। আপনি কি জানেন না আল্লাহ পাক মেয়েদের জন্য পর্দা ফরয করেছেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلي
অর্থঃ তোমরা তোমাদের ঘরের মধ্যে অবস্থান করবে। আইয়্যামে জাহিলিয়াতের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করে রাস্তায় ঘুরে বের হয়ো না।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: আয়াত শরীফ ৩৩)

এবং হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اَلْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَاِذَا خَرَجَتْ اِسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ
অর্থঃ মহিলারা পর্দায় থাকবে। যখন তারা বেপর্দা হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি ঝুঁকি দেয়।

সুতরাং, পর্দা করা মানেই হচ্ছে ঘরে অবস্থান করা। আর যদি শরয়ী প্রয়োজনে বের হতে হয় তবে আপাদমস্তক অর্থাৎ মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকেই ঘর থেকে বের হতে হবে।
এ সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
يَاَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ وَ بَنتِكَ وَ نِسَاءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَا بِيْبِهِنَّ ذلِكَ اَدْني اَنْ يُّعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَ كَانَ اللّهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
অর্থঃ হে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আপনি আপনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে, কন্যাগণ উনাদেরকে এবং মুমিনগণ উনাদের স্ত্রীগণ উনাদেরকে বলুন, উনারা যেন উনাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে রাখেন। এতে উনাদেরকে চিনা সহজ হবে। ফলে উনাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: আয়াত শরীফ ৫৯)

অতএব উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীস শরীফ উনাদের আলোকে হযরত সাইয়্যিদাতুন নিসা উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযুর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম স্বাধীনামহিলা এবং পরাধীন মহিলা বা দাসীদের মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন। পবিত্র আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীস শরীফ মুতাবিক যারা পর্দা করবে, পর্দার মধ্যে ঘরে অবস্থান করবে এমনকি প্রয়োজনে ঘর থেকে বাইরে বের হবে তারাই মূলত স্বাধীনমহিলা। এমন পর্দানশীল মহিলা যখন ঘর থেকে বের হন তখন তাকে কেউ উত্যক্ত করে না বরং প্রত্যেকে উনাকে সম্মান করে।

আর যারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন খতামুন নাবিয়্যিন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ অমান্য করে বেপর্দা অবস্থায় থাকে অথবা ঘর থেকে বের হয় , তারাই মূলত পরাধীনমহিলা। এমন বেপর্দা মহিলা যখন ঘরে-বাইরে, রাস্তা-ঘাটে, অফিস-আদালতে অর্থাৎ যার যার কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করে তখনই তারা বেপর্দার কারণে উত্যক্ত হয় অর্থাৎ শয়তানের উঁকি ঝুঁকি দেয়ার ফলেই তারা নিজেদের অবমাননা নিজেরাই ডেকে আনে। (নাউযুবিল্লাহ্)

স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না” (সূরা আল মায়িদা: ৫)
এরপর সূরা নূর এর ৩০ নং আয়াতে পুরুষদের চোখ নীচু রাখতে এবং লজ্জা স্থান হিফাজত করতে বলা হয়েছে। ৩১ নং আয়াতে নারীদেরও একই কথা বলা হয়েছে।

যেসব বাবা মায়েরা তার মেয়ে সন্তান কে আধুনিকতা বা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিখিয়েছেন তারা কি জানেন এবং সেসব ছেলেরা আধুনিক মেয়ে খুজছেন বিয়ের তারা কি জানেন-

হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, চার ধরনের মেয়ে বিয়ে করলে সংসারে সুখ হবেনাঃ
(১) "আহেরা":- আহেরা হল তারা, যারা রূপের চর্চা করে মানুষকে দেখানোর জন্য এই জাতীয় মেয়ে যারা বিয়ে করবে তাদের সংসারে সুখ হবে না।

(২) "নাদিছা":- নাদিছা তাদের বলা হয়, যারা শুধু রূপের চর্চা করেনা বরং রূপের অহংকারও করে বললে বুঝতে পারবেন চামড়া একটু ফর্সা, তাদের পাশে যদি কালো মেয়ে যায়, তারা তাকে মেয়েই মনে করে না। এত অহংকার ওদের মনে এদের বিয়ে করলে সংসারে সুখ হবে না।

(৩) "মুত্তালিহা":- মুত্তালিহা বিশ্লেষণ করতে গেলে আগে তাদের পরিচয় দেয়া লাগবে। স্ত্রীদের মধ্যে ২টা ভাগ আছে-- ১) যারা বলে তুমি আমায় কি দিয়েছো? ২) আমি বলেই তোমার ভাত খাচ্ছি! তারা স্বামীর অবাধ্য হয়, স্বামীকে খোটা দেয় কারো বুঝতে বাকি আছে ভাই, এ জাতীয় মেয়ে দ্বারা কখনও সংসারে সুখ আসতে পারে না।

(৪) "মুবারিয়া":- মুবারিয়া হল তারা, যারা স্বামী কাছে থাকলে ভাল আর স্বামী না থাকলে আরো ভালো। স্বামীর ইজ্জত মান সম্মান সব গেলেও তারা বেহায়াপনা বেপর্দায় চলাফেরা করে। এ জাতীয় মেয়েরা সংসারের গদিতে আগুন জ্বালায়!

এখনো সময় আছে সমাজ থেকে ব্যভিচার, প্রেমের মত হারাম সম্পর্ক, পরকীয়া, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, আধুনিকতার নামে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া এবং বেপর্দা হওয়া থেকে বিরত থাকুন। যদি মুসলমান হয়ে থাকেন তবে তওবা করে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা উনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আর যদি আধুনিক হয়ে থাকেন তবে পর্দা এবং নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকে নিজের সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করুন।

আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে বেপর্দা আর ঘৃণ্য কাজ থেকে দুরে রাখুন, গুনাহ করা হতে বিরত রাখুন। আমীন।

এই পোস্টটি লিখেছেনঃ
Online Journalist and Writer.
FB: @rukhsaarrubabaa

বিঃ দ্রঃ আমাদের পোষ্ট গুলো যদি আপনার ভাল লাগে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন তাহলে আর ভাল পোষ্ট নিয়ে হাজির হব

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.